Menu |||

মানবতার একমাত্র জীবনাদর্শ ইসলামই সর্বপ্রথম শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে এ ধরাতে পাঠিয়ে এমন কতগুলো মৌলিক চাহিদা দান করেছেন যেগুলো পূরণের জন্য মানুষকে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় লেগে থাকতে হয়, কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাতে হয় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

জীবিকার সন্ধানে নিরন্তর ছুটে চলতে নির্দেশ প্রদান করে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যখন তোমাদের নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তথা হালাল রুজি অনুসন্ধান কর।’ (সুরা জুমআ’, আয়াত-১০)

অর্থাৎ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে জীবনোপকরণের পেছনে ছুটে চলা এবং তা অর্জন করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রাখাকে ফরজ ইবাদত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতো হালাল রুজি অন্বেষণ করাও ফরজ।’

আর তাই তো জীবনোপকরণের সন্ধানে মানুষকে বিভিন্ন পেশায় শ্রম বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। যারা শ্রম সাধনা করে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই শ্রমিক। তবে, আধুনিককালে শ্রমিক বলতে সাধারণত কর্মচারী, দিনমজুর, মেথর, কুলি, তাঁতি, মুচি, জেলে, ধোপা, রিকশাচালক, গাড়িচালক ও হেলপার প্রভৃতি পেশাজীবীকে বুঝায়। তারা সর্বকালেই অবহেলিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত শ্রেণী হিসেবে সমাজে বসবাস করতো এবং সমাজের মানুষ তাদের সমাজের নীচু শ্রেণীর মানুষ বলে মনে করতো।

মানবতার একমাত্র জীবনাদর্শ ইসলামই সর্বপ্রথম এসব শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

ইসলামের কাণ্ডারি মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিককে তার শ্রমোৎপন্ন বস্তু থেকে তাকে কিছু অংশ দিয়ে দাও। কারণ আল্লাহর শ্রমিককে কিছুতেই তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’ (তিরমিজি)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কোনো ভৃত্য যদি তোমাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে তাকে হাতে ধরে নিজের সঙ্গে আহার করতে দাও, সে যদি বসতে অস্বীকার করে তবুও অন্তত দু’এক মুঠি খাদ্য তাকে অবশই দেবে। কারণ সে আগুনের উত্তাপ ও ধূম্র এবং খাদ্য প্রস্তুত করার কষ্ট সহ্য করেছে।’ (তিরমিজি)

এভাবে ইসলাম শ্রমিককে মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছে। শ্রমিককে কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মজুরি আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের শ্রমিককে ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দেবে।’ (ইবনে মাজাহ)

এর মর্মকথা হলো- একজন শ্রমিক যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারো অধীনে কাজ করে- তখন তার কষ্টের সীমা থাকে না। কিন্তু যখনই সে কাজ শেষে ঠিক মতো পারিশ্রমিক হাতে পায় তখনি তার সব দুঃখ কষ্ট ঘুচে যায়। সে তা দিয়ে তার পরিবার-পরিজনের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।

হজরত বেলাল, আম্মার, খাব্বাব, সুয়াইব, যায়েদ, উসামা (রা.) সবাই দাস-শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল অনেক ঊর্ধ্বে।

মহানবী (সা.) হজরত বেলালকে (রা.) ইসলামে প্রথম মোয়াজ্জিন এবং হজরত উসামা বিন যায়েদকে (রা.) ইসলামে প্রথম যুব সেনাপতি নিযুক্ত করে দাস-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেন। তার কোনো উম্মত কর্তৃক যেন কোনো শ্রমিককে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য মহানবী (সা.) কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন এভাবে, ‘আল্লাহ বলেছেন, কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আমার ঝগড়া হবে।
১. যে আমার নামে চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে
২. যে স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে
৩. যে শ্রমিকের দ্বারা কাজ পুরোপুরি আদায় করে নেয় অথচ তার পুরোপুরি পারিশ্রমিক আদায় করেনি।’ (বোখারি)

প্রকৃতপক্ষে ইসলামী দর্শন অনুযায়ী সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকেই হতে হবে শ্রমজীবী।

আমাদের নবী (সা.) নিজের জামা নিজেই ধৌত করতেন এবং নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন।
হজরত দাউদ (আ.) কামারের কাজ করতেন।
হজরত ইদ্রিস (আ.) দর্জির কাজ করতেন।
হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন।
অন্য নবী-রাসুলও নিজেদের কাজ নিজেরাই করতেন।

পরের শ্রমে জীবিকা নির্বাহ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন পরিশ্রম করবে, অন্যজন তাকে বঞ্চিত করে তার ফল ভোগ করবে- এ রকম সামাজিক ব্যবস্থা সবচেয়ে জঘন্য জুলুম।

মহানবী (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের অনুসৃত ইসলামি সাম্যবাদ ছিল শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। এ সাম্যবাদে খলিফা এবং উটচালক, আমির এবং বায়তুল মালের চৌকিদার অর্থাৎ শ্রমিক-মালিকের জীবনযাত্রার মধ্যে কোনো তারতম্য ছিল না। তাই শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ হওয়া জরুরি। সবাই এক আদমের সন্তান। সবাই রক্তই লাল। সবাই মানুষ। শ্রমিক মালিকের মধ্যে কোনো প্রার্থক্য নেই।

মহানবী (সা.) মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন এভাবে- ‘তোমাদের চাকর-চাকরানী, দাস-দাসী তথা শ্রমিকরা প্রকৃতপক্ষে তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা’আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন সে যেন তার ভাইকে তাই খাওয়ায়, যা সে নিজে খায়। তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। আর তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ যেন তার ওপর চাপিয়ে না দেয়। একান্ত যদি চাপানো, তাহলে তা সমাধান করার ব্যাপারে তাকে যেন সাহায্য করে।’ (বোখারি ও মুসলিম)

এছাড়াও বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) দাস-দাসী ও শ্রমিকদের অধিকার যথাযথ আদায়ের তাগিদ প্রদান করেছেন।

এতদসত্ত্বেও আমাদের সমাজে শ্রমজীবী মানুষের কোনো মর্যাদা নেই। তাদের চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়। চাকর-চাকরানী, মেথর, কুলি, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা, সুইপার, ঝাড়ুদার, কামলা, পিয়ন এবং গার্মেন্টকর্মী এদের কারোর শ্রমই আমাদের সমাজে যথাযথ মর্যাদা পায়নি। তারা মানুষ হিসেবেও তাদের অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।

আজ বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক নম্বর খাত গার্মেন্ট শিল্পে কর্মরত কর্মচারীরা দারুণভাবে উপেক্ষিত। তাদের প্রাপ্য বেতন ঠিকমতো আদায় করা হয় না। বেতনও নির্ধারণ করা হয় একেবারে কম। এজন্য কখনো কখনো শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়, রাস্তা অবরোধ করতে হয়, কখনো কখনো পুলিশের গুলিতে জীবনও বিলিয়ে দিতে হয়। এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার।
সেজন্য ইসলাম শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা হতে হবে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সব স্তরে।

তাই বলবো- ইসলাম শ্রমজীবীদের সব সমস্যার সার্বিক ও ন্যায়ানুগ সমাধানের যে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে তা সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে এগিয়ে এলেই তারা বেঁচে থাকতে পারে।
তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার মন মানসিকতা আল্লাহর কাছে মে দিবসের কামনা হওয়া উচিত।

লেখকঃ বদরুল এইচ জোসেফ,
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, অগ্রদৃষ্টি-ঢাকা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দরা

» ভেঙে ফেলা হবে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক!

» জামায়াত ‘বাধ্য হয়ে’ পাকিস্তানের পক্ষে ছিল: শফিকুর

» এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা, বসলেন ইউনূসের পাশের চেয়ারে

» আজকের দিনটি গোটা জাতির জন্য আনন্দের: ফখরুল

» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

মানবতার একমাত্র জীবনাদর্শ ইসলামই সর্বপ্রথম শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে এ ধরাতে পাঠিয়ে এমন কতগুলো মৌলিক চাহিদা দান করেছেন যেগুলো পূরণের জন্য মানুষকে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় লেগে থাকতে হয়, কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাতে হয় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

জীবিকার সন্ধানে নিরন্তর ছুটে চলতে নির্দেশ প্রদান করে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যখন তোমাদের নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তথা হালাল রুজি অনুসন্ধান কর।’ (সুরা জুমআ’, আয়াত-১০)

অর্থাৎ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে জীবনোপকরণের পেছনে ছুটে চলা এবং তা অর্জন করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রাখাকে ফরজ ইবাদত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতো হালাল রুজি অন্বেষণ করাও ফরজ।’

আর তাই তো জীবনোপকরণের সন্ধানে মানুষকে বিভিন্ন পেশায় শ্রম বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। যারা শ্রম সাধনা করে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই শ্রমিক। তবে, আধুনিককালে শ্রমিক বলতে সাধারণত কর্মচারী, দিনমজুর, মেথর, কুলি, তাঁতি, মুচি, জেলে, ধোপা, রিকশাচালক, গাড়িচালক ও হেলপার প্রভৃতি পেশাজীবীকে বুঝায়। তারা সর্বকালেই অবহেলিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত শ্রেণী হিসেবে সমাজে বসবাস করতো এবং সমাজের মানুষ তাদের সমাজের নীচু শ্রেণীর মানুষ বলে মনে করতো।

মানবতার একমাত্র জীবনাদর্শ ইসলামই সর্বপ্রথম এসব শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

ইসলামের কাণ্ডারি মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিককে তার শ্রমোৎপন্ন বস্তু থেকে তাকে কিছু অংশ দিয়ে দাও। কারণ আল্লাহর শ্রমিককে কিছুতেই তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’ (তিরমিজি)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কোনো ভৃত্য যদি তোমাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে তাকে হাতে ধরে নিজের সঙ্গে আহার করতে দাও, সে যদি বসতে অস্বীকার করে তবুও অন্তত দু’এক মুঠি খাদ্য তাকে অবশই দেবে। কারণ সে আগুনের উত্তাপ ও ধূম্র এবং খাদ্য প্রস্তুত করার কষ্ট সহ্য করেছে।’ (তিরমিজি)

এভাবে ইসলাম শ্রমিককে মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছে। শ্রমিককে কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মজুরি আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের শ্রমিককে ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দেবে।’ (ইবনে মাজাহ)

এর মর্মকথা হলো- একজন শ্রমিক যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারো অধীনে কাজ করে- তখন তার কষ্টের সীমা থাকে না। কিন্তু যখনই সে কাজ শেষে ঠিক মতো পারিশ্রমিক হাতে পায় তখনি তার সব দুঃখ কষ্ট ঘুচে যায়। সে তা দিয়ে তার পরিবার-পরিজনের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।

হজরত বেলাল, আম্মার, খাব্বাব, সুয়াইব, যায়েদ, উসামা (রা.) সবাই দাস-শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল অনেক ঊর্ধ্বে।

মহানবী (সা.) হজরত বেলালকে (রা.) ইসলামে প্রথম মোয়াজ্জিন এবং হজরত উসামা বিন যায়েদকে (রা.) ইসলামে প্রথম যুব সেনাপতি নিযুক্ত করে দাস-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেন। তার কোনো উম্মত কর্তৃক যেন কোনো শ্রমিককে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য মহানবী (সা.) কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন এভাবে, ‘আল্লাহ বলেছেন, কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আমার ঝগড়া হবে।
১. যে আমার নামে চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে
২. যে স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে
৩. যে শ্রমিকের দ্বারা কাজ পুরোপুরি আদায় করে নেয় অথচ তার পুরোপুরি পারিশ্রমিক আদায় করেনি।’ (বোখারি)

প্রকৃতপক্ষে ইসলামী দর্শন অনুযায়ী সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকেই হতে হবে শ্রমজীবী।

আমাদের নবী (সা.) নিজের জামা নিজেই ধৌত করতেন এবং নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন।
হজরত দাউদ (আ.) কামারের কাজ করতেন।
হজরত ইদ্রিস (আ.) দর্জির কাজ করতেন।
হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন।
অন্য নবী-রাসুলও নিজেদের কাজ নিজেরাই করতেন।

পরের শ্রমে জীবিকা নির্বাহ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন পরিশ্রম করবে, অন্যজন তাকে বঞ্চিত করে তার ফল ভোগ করবে- এ রকম সামাজিক ব্যবস্থা সবচেয়ে জঘন্য জুলুম।

মহানবী (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের অনুসৃত ইসলামি সাম্যবাদ ছিল শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। এ সাম্যবাদে খলিফা এবং উটচালক, আমির এবং বায়তুল মালের চৌকিদার অর্থাৎ শ্রমিক-মালিকের জীবনযাত্রার মধ্যে কোনো তারতম্য ছিল না। তাই শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ হওয়া জরুরি। সবাই এক আদমের সন্তান। সবাই রক্তই লাল। সবাই মানুষ। শ্রমিক মালিকের মধ্যে কোনো প্রার্থক্য নেই।

মহানবী (সা.) মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন এভাবে- ‘তোমাদের চাকর-চাকরানী, দাস-দাসী তথা শ্রমিকরা প্রকৃতপক্ষে তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা’আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন সে যেন তার ভাইকে তাই খাওয়ায়, যা সে নিজে খায়। তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। আর তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ যেন তার ওপর চাপিয়ে না দেয়। একান্ত যদি চাপানো, তাহলে তা সমাধান করার ব্যাপারে তাকে যেন সাহায্য করে।’ (বোখারি ও মুসলিম)

এছাড়াও বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) দাস-দাসী ও শ্রমিকদের অধিকার যথাযথ আদায়ের তাগিদ প্রদান করেছেন।

এতদসত্ত্বেও আমাদের সমাজে শ্রমজীবী মানুষের কোনো মর্যাদা নেই। তাদের চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়। চাকর-চাকরানী, মেথর, কুলি, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা, সুইপার, ঝাড়ুদার, কামলা, পিয়ন এবং গার্মেন্টকর্মী এদের কারোর শ্রমই আমাদের সমাজে যথাযথ মর্যাদা পায়নি। তারা মানুষ হিসেবেও তাদের অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।

আজ বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক নম্বর খাত গার্মেন্ট শিল্পে কর্মরত কর্মচারীরা দারুণভাবে উপেক্ষিত। তাদের প্রাপ্য বেতন ঠিকমতো আদায় করা হয় না। বেতনও নির্ধারণ করা হয় একেবারে কম। এজন্য কখনো কখনো শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়, রাস্তা অবরোধ করতে হয়, কখনো কখনো পুলিশের গুলিতে জীবনও বিলিয়ে দিতে হয়। এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার।
সেজন্য ইসলাম শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা হতে হবে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সব স্তরে।

তাই বলবো- ইসলাম শ্রমজীবীদের সব সমস্যার সার্বিক ও ন্যায়ানুগ সমাধানের যে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে তা সংশ্লিষ্ট সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে এগিয়ে এলেই তারা বেঁচে থাকতে পারে।
তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার মন মানসিকতা আল্লাহর কাছে মে দিবসের কামনা হওয়া উচিত।

লেখকঃ বদরুল এইচ জোসেফ,
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, অগ্রদৃষ্টি-ঢাকা।

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Tue, 3 Dec.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।